লাইলাতুন নিসফা মিন শাবান তথা অর্ধ শাবানের রাত। এ রাতটি শবে বরাত বা লাইলাতুল বরাত হিসেবে পরিচিত। হিজরি বছরের অষ্টম মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত এটি। এ উপলক্ষে আগামীকাল শনিবার (১৫ ফেব্রুয়ারি) সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে। আজই অনুষ্ঠিত হবে শবে বরাত।
মুমিন মুসলমান এ রাতটিকে বিশেষ ফজিলতপূর্ণ মনে করে ইবাদত-বন্দেগি, তওবা-ইসতেগফার ও দোয়া-দরুদে অতিবাহিত করে থাকে। যদিও সম্মিলিতভাবে ইবাদত সম্পর্কে হাদিসে কোনো দিক-নির্দেশনা নেই। তবে রাসুলুল্লাহ সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এ রাতে অধিক পরিমাণে ইবাদত করতেন। নবিজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কিছু আমল দ্বারা বিশেষ কিছু ইবাদত প্রমাণিত হয় যা তিনি করেছেন। সে আলোকে এ রাতের কিছু আমল তুলে ধরা হলো-
এ রাতে দীর্ঘ (কেরাতে) তেলাওয়াতে নফল নামাজ পড়া। অর্ধ শাবানের রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম অধিক পরিমাণে দীর্ঘ নফল নামাজ পড়তেন। হাদিসে এসেছে-
হজরত আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহা বলেন, এক রাতে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘুম থেকে ওঠে নামাজে দাঁড়িয়ে গেলেন এবং সেই নামাজে এতো দীর্ঘ সময় তিনি সেজদায় ছিলেন যে, আমার সন্দেহ হচ্ছিল তিনি ইন্তেকাল করেছেন কিনা। আমি উঠে গিয়ে তার বৃদ্ধাঙ্গুলি নাড়া দিলাম। আঙুলটি নড়ে উঠল। আমি নিশ্চিত হলাম যে তিনি বেঁচে আছেন। এরপর আমি আপন স্থানে ফিরে এলাম। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেজদা থেকে মাথা উঠালেন এবং নামাজ শেষ করে এক পর্যায়ে বললেন- হে আয়েশা! তুমি কি ভেবেছ যে, আল্লাহর নবি তোমার উপর কোনো অবিচার করেছে? আমি বললাম, হে আল্লাহর রাসুল! আমি এমন কিছুই ভাবিনি। আমি বরং আপনাকে দীর্ঘ সময় সেজদায় দেখে ভয় পাচ্ছিলাম যে, আপনাকে আল্লাহ পাক উঠিয়ে নিলেন কিনা! অতপর রাসুল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, তুমি কি জান আজকের এ রাতটি কোন রাত? আমি বললাম, আল্লাহ ও তার রাসুলই ভালো জানেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, এ রাতটি শাবানের পঞ্চদশ রজনী। এতে মহান প্রভু তার বান্দাদের উপর বিশেষ দৃষ্টি দেন। ক্ষমাপ্রার্থীদের ক্ষমা করে দেন। রহমতপ্রার্থীদের রহমত দান করেন। অপরদিকে পরশ্রীকাতর ব্যক্তিদের আপন অবস্থায় ছেড়ে দেন।’ (শুয়াবুল ঈমান, আত তারগীব)
নিসফা শাবানের রাতের দোয়া আল্লাহ তাআলা কবুল করেন। তাই বেশি বেশি দোয়া করা। হাদিসে এসেছে-
হজরত আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, পাঁচটি রাত এমন আছে, যে রাতে বান্দার কোনো দোয়া ফেরত দেওয়া হয় না। আর তাহলা-
১. জুমআর রাতের দোয়া।
২. রজব মাসের প্রথম রাতের দোয়া।
পবিত্র শবে বরাত উপলক্ষে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এক বাণী দিয়েছেন। তিনি বলেন,
“এই সৌভাগ্যময় রজনী মানব জাতির জন্য মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের অশেষ রহমত ও বরকত বয়ে আনে। এ রাতে আল্লাহপাক ক্ষমা প্রদর্শন ও প্রার্থনা পূরণের অনুপম মহিমা দেখান।”
তিনি আরও বলেন,
“এই মহিমান্বিত রাতে ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে আমরা মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি এবং তাঁর অশেষ রহমত, বরকত, নাজাত ও মাগফিরাত অর্জন করতে পারি।”
তিনি সব ধরনের অন্যায়, অনাচার, হানাহানি ও কুসংস্কার পরিহার করে শান্তির ধর্ম ইসলামের চেতনাকে ব্যক্তি, সমাজ ও জাতীয় জীবনের সকল স্তরে প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান।
বায়তুল মুকাররমে বিশেষ আয়োজন
শবে বরাত উপলক্ষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের (ইফা) উদ্যোগে বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদে বিশেষ ওয়াজ, দোয়া মাহফিল, কুরআন তেলাওয়াত ও হামদ-নাতসহ বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছে।
ওয়াজ ও আলোচনা অনুষ্ঠানের সময়সূচি:
- সন্ধ্যা ৬:৩৫: পবিত্র কুরআন ও হাদিসের আলোকে শবে বরাতের শিক্ষা ও করণীয় বিষয়ে ওয়াজ করবেন ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন (ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা)।
- রাত ৭:১০: শবে বরাতের ফজিলত ও তাৎপর্য নিয়ে আলোচনা করবেন ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক আ. ছালাম খান।
- রাত ৮:৫০: শবে বরাতের গুরুত্ব তুলে ধরবেন ড. খলিলুর রহমান মাদানি (ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বোর্ড অব গভর্নরসের গভর্নর ও তামিরুল মিল্লাত কামিল মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ)।
- রাত ৯:৩০: শবে বরাতের শিক্ষা ও করণীয় বিষয়ে আলোচনা করবেন সৈয়দ মোহাম্মদ মোসাদ্দেক বিল্লাহ আল মাদানি (চরমোনাই আহসানাবাদ রশিদিয়া কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ)।
ধর্মপ্রাণ মুসলমানদের প্রতি আহ্বান
শবে বরাতের পবিত্রতা রক্ষা করে যথাযথ ইবাদত-বন্দেগির মাধ্যমে মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আহ্বান জানিয়েছেন দেশের ইসলামিক স্কলাররা। একইসঙ্গে এই পবিত্র রাতে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা এড়াতে এবং শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে সবার সহযোগিতা কামনা করা হয়েছে।