খান মোঃ শাহরিয়ার সাফিন 
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)–কে নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ‘গুঞ্জন’, ‘অসত্য খবর’ ও ‘ভিত্তিহীন বিশ্লেষণ’কে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মন্তব্য করেছেন দলটির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। তাঁর অভিযোগ, এসব সংবাদ প্রকাশের মাধ্যমে ইচ্ছাকৃতভাবে দলটিকে একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক পক্ষের সঙ্গে যুক্ত দেখানো হচ্ছে এবং এনসিপিকে একটি আলাদা রাজনৈতিক পরিচয় থেকে সরে আসার জন্য চাপ তৈরি করার চেষ্টা চলছে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন পত্রিকা, টেলিভিশন ও অনলাইন প্ল্যাটফর্মে এনসিপির বিষয়ে যে সব গুঞ্জন ছড়ানো হচ্ছে, সেগুলো সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। এসব গল্পের উদ্দেশ্য হলো আমাদের অবস্থান দুর্বল করা এবং জনগণের সামনে ভুল বার্তা দেওয়া।”
সংবাদ সম্মেলনে নাহিদ ইসলাম স্পষ্ট করে বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এনসিপি ৩০০ আসনেই প্রার্থী দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তিনি জানান, দলীয় মনোনয়ন বিক্রির সময় সারা দেশ থেকে ব্যাপক সাড়া পাওয়া গেছে এবং এর মধ্যেই এক হাজার ৪৮৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র নিয়েছেন, যা এনসিপির সাংগঠনিক বিস্তৃতি ও রাজনৈতিক সম্ভাবনার ইঙ্গিত বহন করে।
তিনি বলেন, “আমরা কারও ওপর নির্ভর করে রাজনীতি করি না। আমাদের লক্ষ্য হলো জনগণকে নিয়ে একটি স্বচ্ছ, আধুনিক ও জবাবদিহিমূলক রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে তোলা। এজন্যই আমরা স্বাধীনভাবে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।”
ক্ষমতা ভাগাভাগি, আসন সমঝোতা বা রাজনৈতিক জোট গঠনের বিষয়ে নাহিদ ইসলাম দৃঢ় অবস্থান ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “ক্ষমতার জন্য আমরা কারও সঙ্গে আপস করব না। কোনো পদ বা আসনের লোভে এনসিপি তার আদর্শ বিসর্জন দেবে না। আমরা যদি একটি আসনও না পাই, তবুও আমাদের নীতি, দর্শন ও লক্ষ্য থেকে সরে যাব না।”
নাহিদ ইসলামের মতে, তাদের রাজনীতি ‘সমঝোতা–নির্ভর’ নয়, বরং ‘আদর্শ–নির্ভর’।
রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর শাহবাগে শহীদ আবু সাঈদ কনভেনশন সেন্টারে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে ৬ থেকে ২০ নভেম্বর পর্যন্ত দলীয় মনোনয়নপত্র বিক্রির কার্যক্রম শেষ হওয়ার পর এনসিপির কেন্দ্রীয় নির্বাচন পরিচালনা কমিটি সংবাদ সম্মেলনের এই আয়োজন করে।
এখানে নেতারা মনোনয়ন বিক্রির সার্বিক অগ্রগতি, প্রার্থীদের যোগ্যতা যাচাই, নির্বাচনী কর্মপরিকল্পনা এবং আগামী দিনের রাজনৈতিক রোডম্যাপ সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরেন।
সংবাদ সম্মেলনের পর একই স্থানে ১,৪৮৪ জন মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রার্থীর অংশগ্রহণে একটি বৃহৎ মতবিনিময় সভার আয়োজন করে এনসিপি। সেখানে দলের কেন্দ্রীয় নেতারা নির্বাচনী আচরণবিধি, প্রচার–কৌশল, মাঠপর্যায়ের সাংগঠনিক প্রস্তুতি, ভোটার–যোগাযোগ পরিকল্পনা এবং আগামী সপ্তাহগুলোতে দল কীভাবে নির্বাচনী মাঠে সক্রিয় থাকবে—এসব বিষয়ে নির্দেশনা দেন।
নাহিদ ইসলাম সভায় বলেন, “আমরা জনগণের আস্থা নিয়েই সামনে এগোতে চাই। তাই প্রত্যেক প্রার্থীকে মাঠে নেমে মানুষের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ করতে হবে। আমাদের আদর্শ শক্তিশালী হলে আসন–সংখ্যা নিজে থেকেই আসবে।”
সর্বশেষে নাহিদ ইসলাম গণমাধ্যমের প্রতি আহ্বান জানান, “আমরা গণমাধ্যমকে শত্রু নয়, সহযোগী মনে করি। কিন্তু সংবাদ প্রকাশের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীলতা ও বস্তুনিষ্ঠতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যাচাইবাছাই ছাড়া গুঞ্জন–নির্ভর সংবাদ শুধু রাজনীতিকে নয়, জনগণকেও বিভ্রান্ত করে।”
তিনি বলেন, এনসিপি সব রাজনৈতিক মতের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে, তবে দলকে নিয়ে ‘অবাস্তব বিশ্লেষণ’ ছড়ানো হলে তারা তার জবাব দেবে।
