Dhaka ০১:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৫, ৪ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
News Title :
বিএনপির সুযোগ, সম্ভাবনা ও নেতৃত্বের ব্যর্থতা সিলেট-চট্টগ্রামে কেএফসি-বাটা-পিৎজা হাটে হামলা ও লুটপাট: বিনিয়োগ সম্মেলনের মাঝেই উদ্বেগে ব্যবসায়ীরা ঈদুল ফিতরে রাজধানীতে ঐতিহ্যের ঝলক, আলোচনায় নাসিরুদ্দিন হোজ্জার পাপেট বাংলাদেশের সংখ্যালঘু প্রসঙ্গে যা বলল মার্কিন প্রতিবেদন পারিবারিক বিরোধে নিহত জাফর আলী: অভিযুক্ত খালাতো ভাই আব্বাস আলী মহেশপুরে জামায়াত-বিএনপির পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশ মার্কিন বাজারে ঝড় তুলেছে চীনা এআই কোম্পানি ডিপসিক জাতীয় নির্বাচন নিয়ে কি বলছে নতুন রাজনৈতিক দল এনসিপি? বিএনপি নেতার প্রটোকল ব্যবহার করে ভারতে পালিয়েছেন স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা! দুই ভাইয়ের সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে প্রতিবেশীর মৃত্যু, আহত ৩

অপারেশন ডেভিল হান্ট: বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার তিন হাজারের বেশি

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতাদের দাবির মুখে শুরু হওয়া ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামের বিশেষ অভিযানে সারাদেশে এ পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছেন। যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে পরিচালিত এই অভিযানের উদ্দেশ্য ও এর আওতায় আটক ব্যক্তিদের পরিচয় নিয়ে দেশজুড়ে চলছে আলোচনা।

গাজীপুরে হামলা ও অভিযানের সূচনা

গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর এবং সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর প্রাণঘাতী আক্রমণের পর এই বিশেষ অভিযানের সূচনা হয়। উক্ত হামলায় গুরুতর আহত এক ব্যক্তি বুধবার মারা যান।

গাজীপুরে সর্বোচ্চ গ্রেপ্তার

চলমান অভিযানে গাজীপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছেন। পাঁচ দিনের অভিযানে সেখানে ৩৩২ জনকে আটক করা হয়েছে। গাজীপুর আদালত প্রাঙ্গণে দেখা গেছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের স্বজনরা প্রিয়জনের খোঁজ নিতে ভিড় করেছেন। তাদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অনেককে গভীর রাতে সাদা পোশাকে আটক করে নিয়ে গেছে।

নিরপরাধদের গ্রেপ্তারের অভিযোগ

অভিযানের শুরুর দিনেই গাজীপুর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত সত্তরোর্ধ্ব মোমিনউদ্দিন ভান্ডারিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার পরিবার দাবি করেছে, তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। আদালতে হাজির করার পর তাকে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, আইনজীবীরা ভয় পাওয়ায় তারা সঠিকভাবে আইনি লড়াইও চালাতে পারছেন না।

একজন তরুণী জানান, তার মাকেও মধ্যরাতে আটক করা হয়েছে, যদিও তাদের পরিবার কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রমে যুক্ত নয়। তার প্রশ্ন, “যারা রাতের বেলায় বাড়ি ভাঙচুর করেছে, তাদের কাউকে আটক করা হয়নি?”

পুলিশের বক্তব্য

গাজীপুরের পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, “অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে এমন যেকোনো ব্যক্তিকে আমরা আইনের আওতায় আনছি।”

সরকার ও মানবাধিকার সংস্থার প্রতিক্রিয়া

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরুর পর থেকে তিন হাজারের বেশি মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাদের দলীয় নেতাকর্মীরাই এই অভিযানের প্রধান লক্ষ্যবস্তু।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, “বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা না করেই নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।” তিনি আরও বলেন, “এই অভিযানের ফলে মব জাস্টিস বন্ধ হবে বা অপরাধ কমবে—এমন কোনো লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না। বরং বিরোধী মত দমন করাই এর মূল উদ্দেশ্য বলে মনে হচ্ছে।”

ধানমন্ডির ঘটনা ও অভিযানের সূত্রপাত

৫ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়িটি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় গাজীপুরে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদের উপর হামলা চালানো হয়। পরদিন আন্দোলনকারীরা গাজীপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে এবং সারাদেশে অভিযানের দাবি জানায়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং উপদেষ্টারা স্পষ্ট করেছেন যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দাবির ভিত্তিতেই এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা যারা করবে, তারাই আমাদের লক্ষ্যবস্তু।”

সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অপরাধ দমনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হলেও এটি নিরপরাধদের হয়রানির হাতিয়ার হয়ে উঠছে বলে সমালোচনার মুখে পড়েছে।

Tag :

Write Your Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Save Your Email and Others Information

About Author Information

Md. Nasim

বিএনপির সুযোগ, সম্ভাবনা ও নেতৃত্বের ব্যর্থতা

অপারেশন ডেভিল হান্ট: বিশেষ অভিযানে গ্রেপ্তার তিন হাজারের বেশি

Update Time : ০৫:১৪:০৭ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্র নেতাদের দাবির মুখে শুরু হওয়া ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ নামের বিশেষ অভিযানে সারাদেশে এ পর্যন্ত তিন হাজারের বেশি মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছেন। যৌথ বাহিনীর সমন্বয়ে পরিচালিত এই অভিযানের উদ্দেশ্য ও এর আওতায় আটক ব্যক্তিদের পরিচয় নিয়ে দেশজুড়ে চলছে আলোচনা।

গাজীপুরে হামলা ও অভিযানের সূচনা

গাজীপুরে সাবেক মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর এবং সেখানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ওপর প্রাণঘাতী আক্রমণের পর এই বিশেষ অভিযানের সূচনা হয়। উক্ত হামলায় গুরুতর আহত এক ব্যক্তি বুধবার মারা যান।

গাজীপুরে সর্বোচ্চ গ্রেপ্তার

চলমান অভিযানে গাজীপুর জেলায় সবচেয়ে বেশি মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছেন। পাঁচ দিনের অভিযানে সেখানে ৩৩২ জনকে আটক করা হয়েছে। গাজীপুর আদালত প্রাঙ্গণে দেখা গেছে, গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের স্বজনরা প্রিয়জনের খোঁজ নিতে ভিড় করেছেন। তাদের অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা অনেককে গভীর রাতে সাদা পোশাকে আটক করে নিয়ে গেছে।

নিরপরাধদের গ্রেপ্তারের অভিযোগ

অভিযানের শুরুর দিনেই গাজীপুর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত সত্তরোর্ধ্ব মোমিনউদ্দিন ভান্ডারিকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার পরিবার দাবি করেছে, তিনি ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং দীর্ঘদিন রাজনীতি থেকে দূরে ছিলেন। আদালতে হাজির করার পর তাকে দুই দিনের রিমান্ডে পাঠানো হয়। পরিবারের সদস্যরা বলছেন, আইনজীবীরা ভয় পাওয়ায় তারা সঠিকভাবে আইনি লড়াইও চালাতে পারছেন না।

একজন তরুণী জানান, তার মাকেও মধ্যরাতে আটক করা হয়েছে, যদিও তাদের পরিবার কোনো রাজনৈতিক কার্যক্রমে যুক্ত নয়। তার প্রশ্ন, “যারা রাতের বেলায় বাড়ি ভাঙচুর করেছে, তাদের কাউকে আটক করা হয়নি?”

পুলিশের বক্তব্য

গাজীপুরের পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো. যাবের সাদেক জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে সরকারের নির্দেশ অনুযায়ী অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। তিনি বলেন, “অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারে এমন যেকোনো ব্যক্তিকে আমরা আইনের আওতায় আনছি।”

সরকার ও মানবাধিকার সংস্থার প্রতিক্রিয়া

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ শুরুর পর থেকে তিন হাজারের বেশি মানুষ গ্রেপ্তার হয়েছেন এবং বেশ কিছু অস্ত্র উদ্ধার করা হয়েছে। তবে আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, তাদের দলীয় নেতাকর্মীরাই এই অভিযানের প্রধান লক্ষ্যবস্তু।

মানবাধিকারকর্মী নূর খান লিটন বলেন, “বয়স ও শারীরিক অবস্থা বিবেচনা না করেই নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।” তিনি আরও বলেন, “এই অভিযানের ফলে মব জাস্টিস বন্ধ হবে বা অপরাধ কমবে—এমন কোনো লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না। বরং বিরোধী মত দমন করাই এর মূল উদ্দেশ্য বলে মনে হচ্ছে।”

ধানমন্ডির ঘটনা ও অভিযানের সূত্রপাত

৫ ফেব্রুয়ারি ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যকে কেন্দ্র করে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের ঐতিহাসিক বাড়িটি বুলডোজার দিয়ে গুঁড়িয়ে দেওয়ার পর সারাদেশে আওয়ামী লীগের নেতাদের বাড়িঘরে হামলা ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। এরই ধারাবাহিকতায় গাজীপুরে মোজাম্মেল হকের বাড়িতে হামলা ও বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের ছাত্রদের উপর হামলা চালানো হয়। পরদিন আন্দোলনকারীরা গাজীপুরে বিক্ষোভ সমাবেশ করে এবং সারাদেশে অভিযানের দাবি জানায়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ব্যাখ্যা

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং উপদেষ্টারা স্পষ্ট করেছেন যে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের দাবির ভিত্তিতেই এ অভিযান পরিচালিত হচ্ছে। স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লে. জে. (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, “দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা যারা করবে, তারাই আমাদের লক্ষ্যবস্তু।”

সরকারের ভাষ্য অনুযায়ী, ‘অপারেশন ডেভিল হান্ট’ অপরাধ দমনের উদ্দেশ্যে পরিচালিত হলেও এটি নিরপরাধদের হয়রানির হাতিয়ার হয়ে উঠছে বলে সমালোচনার মুখে পড়েছে।